Impact Stories
তৃষা: একটি ছোট্ট মেয়ের গল্প
২০১৩ সাল থেকে পথচলা শুরু ‘প্রয়াস’– এর আই আই টি দিল্লির প্রাক্তনী কিছু তরুণের হাত ধরে। পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তিক বাঁকুড়া, বীরভূম, মালদা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা দিয়ে শুরু করে প্রায় সাত বছর পার করে ফেলেছি আমরা।| এরপর ২০১৯ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার অন্তর্গত আমতলা নামক শহরতলির একটি ছোটো গ্রাম বিদ্যানগর থেকে আরও বেশ কিছু তরুণ সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলা। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের মানুষ এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন এবং বহু মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার জন্যে এই সাহায্য অপরিহার্য। বিগত আটবছর ধরে বিভিন্ন সহৃদয় মানুষের সহায়তায় এই সংস্থার পক্ষে বহু অভাবগ্রস্ত মানুষের কাছে সাহায্যের হাত বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
কথায় আছে যে বর্তমান প্রজন্ম আগামীর কারিগর, নতুন সমাজর পথিকৃত। এমনই এক সুন্দর ভবিষ্যত গঠনের কারিগরের দেখা পাই আমরা, প্রয়াসের সদস্যরা, আমতলার নিকট একটি গ্রামে। একটি ছোট্ট মেয়ে, তৃষা হালদার, অবিশ্বাস্যভাবে এগিয়ে আসে তার যতসামান্য সঞ্চয় থেকে বিশাল অঙ্কের সাহায্য নিয়ে।
বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি সর্বজন প্রশংসিত প্রকল্প হল কন্যাশ্রী প্রকল্প, যা আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত গরীব মেয়েদের শিক্ষাকে সমর্থন করার উদ্দেশ্য নিয়ে রূপায়ণ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় আসা মেয়েরা প্রতিবছর ১,000 টাকা করে পায় ১৩ বছর বয়স থেকে এবং আঠেরো বছর বয়স হলে এককালীন ২৫০০০ টাকা পায়। নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে আটকানো আরো একটি প্রধান উদ্দেশ্য এই প্রকল্পের।
তৃষা হালদার দক্ষিণ 24 পরগণার ফতেপুর শ্রীনাথ ইন্সটিটিউশনের দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরতা এবং কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আসা এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রী। অতি সম্প্রতি আঠারো বছর উত্তীর্ণ হওয়ার পরে কন্যাশ্রী প্রকল্পের নির্ধারিত ২৫০০০ টাকা পায় তৃষা। যার মধ্যে ৪০০০ টাকা দান করে কোলকাতা পুলিশ ত্রাণ তহবিলে। ঘটনাক্রমে তৃষা ‘প্রয়াস’ সম্পর্কে অবগত হয় এবং সাধ্যমতো কিছু সাহায্য করার ইচ্ছাপ্রকাশ করে। সেইমতো বাড়ির গুরুজনদের অবগত রেখেই তৃষা আমাদের সদস্যদের হাতে তুলে দেয় ৫০০০ টাকা।
তৃষা এই বয়সে মানুষকে সাহায্য করার যে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। অতিসামান্য অঙ্কের এই অনুদান আমাদের প্রয়াসের সমস্ত সদস্যদের কাছেই অতুলনীয়। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় সমগ্র জনসাধারণের কাছে এই অনুদান উদাহরণ স্বরূপ। দান করার জন্যে স্বল্প আয় কোনো প্রতিবন্ধকতাই নয় তার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ তৃষা। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অভাবী মানুষের সেবা করার দৃঢ় অঙ্গীকারের উদাহরণ তৃষা। আশা করি ভবিষ্যতে এই ছোট্টো মেয়েটির থেকে অনুপ্রেরণা পাবে বহু মানুষ এবং তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে অভাবগ্রস্ত মানুষের সেবায়।
‘প্রয়াস’-এর সকল সদস্যের তরফ থেকে তৃষাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| যদিও এই প্রয়াসকে প্রকৃত অর্থে সাধুবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। ছোট্ট এই বন্ধুর প্রয়াস তখনই সফলতার শিখর ছোঁবে যখন আরো অনেক মানুষ তার এই কাজের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে আসবে সমাজের উন্নতির জন্য। আমাদের সকল সদস্য তথা সমগ্র সমাজের কাছে খুব বড় এবং অনুপ্রাণিত হওয়ার মতো উদাহরণ হয়ে উদয় হলো তৃষা| তৃষাকে তার আগামী জীবনের জন্য অনেক ভালোবাসা আর শুভকামনা রইল।
কলমে: অণ্বেষা মণ্ডল